মাঝখানে প্রায় তিনশ বিঘা আয়তনের , দীঘি। শীতকালে লেকের পানিতে ডানা ঝাপটা, ঝগড়া-বিবাদে অতিথি পাখির কিচিরমিচির।
বর্ষায় টইটম্বুরের আর এক অপরূপ দৃশ্য দেখা যায়।এই লেকের সৌন্দর্য দেখতে পর্যটক ও দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেই থাকে। কেউ লেকের
পাড়ে হেঁটে, কেউ পাকা ঘাটে বসে পানিতে পা ডুবিয়ে, কেউবা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় চড়ে লেকের পানিতে ভাসমান সুন্দর দৃশ্য উপভোগ
করেন। শীতকালে পিকনিক পার্টির জন্য দীঘির পাড়ে ভিড় হয়।লেকটি জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা সদর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে
অবস্থিত। নান্দাইল দিঘী উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ দীঘি যা প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করে। হ্রদটি 1610 সালে নন্দলাল
নামে এক রাজা খনন করেছিলেন বলে কথিত আছে। তাঁর নামে এটি নান্দাইল দীঘি নামে পরিচিত। স্থানীয় প্রবীণদের মতে, রাণীর ইচ্ছা
নুসারে মানুষের জলাবদ্ধতা নিরসনে রাজা নন্দলাল কয়েক হাজার শ্রমিকের সহায়তায় এক রাতেই ট্যাঙ্কটি খনন করেন।2014 সালে
বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতির বই-জয়পুরহাট শিরোনামের বইয়ের 94 পৃষ্ঠায় নান্দাইল দীঘির বিশদ
মাঝখানে প্রায় তিনশ বিঘা আয়তনের
বিবরণ দেওয়া হয়েছে। আবার ভিন্ন ইতিহাস রয়েছে। বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান সম্পাদিত বইটিতে মৌর্য আমলে এলাকায় খরা ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মাঠ বিস্ফোরিত হবে। ভাড়াটেদের পানি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের ভীষণ প্রয়োজন ছিল। সম্রাট নন্দ বা নন্দলাল জনস্বার্থে এই বিশাল জলাশয় খনন করেন।স্থানীয়রা বলছেন, ৫০ বছর আগেও এই ঐতিহাসিক লেকটি ঘন ঝাউ-জঙ্গলে ঘেরা ছিল। লেকের পাড়ে ছিল উঁচু পাহাড়। শত শত প্রজাতির গাছে বিরল পাখি অবাধে বিচরণ করতে পারত। জঙ্গলে পাওয়া যায় হিংস্র বন্য প্রাণী। বিষাক্ত সাপও এখানে বিচরণ করত। তবে এখন পাহাড় ও গাছপালা কেটে লেকের পাড়ে গড়ে উঠেছে লোকালয়, বসতি, স্কুল-কলেজ। শামখাইল, পাটি সরালী, পানকৌড়ি, গাঙচিল, বালিহাঁস, চাখাচোখীসহ অনেক শীতের অতিথি পাখি এখনো দীঘির পানিতে দেখা যায়।সরকারি মালিকানাধীন ঐতিহাসিক এই দিঘির দেখভাল করে জয়পুরহাট জেলা প্রশাসন।
প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ করা
প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ করা হয়। কিন্তু সে উদ্যোগ বেশিদূর এগোয়নি। এক পর্যায়ে পর্যটন করপোরেশন তাদের অফিস বন্ধ করে দেয়। জনবল প্রত্যাহার। অরক্ষিত নান্দাইল দীঘির পাড়ের গাছপালা উপড়ে পড়েছে। বড় বড় ঢিবি নির্বিচারে কাটা হয়। লেকের পাড়ের জায়গাটি উচ্ছেদ করা হয়। গড়ে ওঠে এলাকা, বসতি ও স্কুল-কলেজ। বর্তমানে জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে দীঘিতে মাছ চাষ করা হচ্ছে।পর্যটক ও দর্শনার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় নান্দাইল দিঘীতে উপজেলা পরিষদ কিছু উন্নয়ন কাজ করেছে। দীঘিতে পাকা ঘাট নির্মাণ করা হয়েছে। দিঘীর পাড়ে পাকা রাস্তা ও হাঁটার পথ নির্মাণ করা হয়েছে। গাছপালা তৈরি করা হয়েছে। লেকের স্বচ্ছ পানির সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য রয়েছে ইঞ্জিন চালিত নৌকা। পিকনিক পার্টির জন্য তৈরি করা হয়েছে বিশ্রামাগার কাম রেস্টহাউস।